উফ!আমার আনন্দ দেখে কে!প্রচুর এক্সাইটেড ছিলাম।কজ সব কাজিনরা অনেকদিন পর একসাথে হবো প্লাজ ছয়বছর পর কোনো নিকটাত্মীয়ের বিয়ে খাবো।আগে সাভার ছিলাম বিধায় কিছু মনে হয়নি।যখন মন চেয়েছে তখনই আব্বু আম্মুকে রেখে একা চলে এসেছি।আমার এসএসসি কমপ্লিট হওয়ার একমাস পরই আব্বুর চিটাগাং পোস্টিং হয়ে যায়।আব্বু আর্মি অফিসার ছিলো বলে কখনো তিন বছর আবার কখনো চার বছর পর পর বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্মি ক্যান্টনমেন্ট এ পোস্টিং হতো।আমার ভালোই লাগতো।বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে পারতাম।বাট এইবার পোস্টিংটা একটু বেশি দূরে হয়ে গেছে।এর আগেও চিটাগাং পোস্টিং হয়েছিলো।তখন আমি ক্লাস ওয়ানে পড়তাম।চিটাগাং থেকে ঢাকা আসতে মিনিমাম ছয় সাত ঘন্টা লাগেই কিন্তু জ্যাম এ আটকা পরলে পুরো একদিন লেগে যায়।এইবার ঢাকায় আসার সময় ভালোভাবেই আসতে পেরেছিলাম।কালই আসার কথা ছিলো শপিং এ।কিন্তু আমি নিজেই মানা করে দিয়েছিলাম।কাল সারাদিন ক্লান্ত ছিলাম।তাই আজ সকাল সকাল বের হয়েছি।ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে।কিছুটা শীত এখনও আছে।ঢাকা শহরে বলতে গেলে সবসময়ই গ্রীষ্মকাল।
.
নাফিসা অনেক্ষণ হাটাহাটির পর আমার কাছে এসে বললো,
– আপু,একবার শিফাপুকে ফোন কর না।এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে জাস্ট বিরক্ত লাগছে।
– গাড়ীতে যেয়ে বস।
– তুই ফোন কর।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে ফোন বের করে আপুকে ফোন দিলাম।কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর আপু রিসিভ করার সাথে সাথেই আমি বলে উঠলাম আর কতক্ষণ লাগবে?
– এতো আগে আসছিস কেনো?আমি না তোদের আধাঘন্টা পর আসতে বললাম।
– আগে তো কখনো নর্থ সাউথে আসি নি।ভাবলাম আগে আসলে তোমার সাথে কিছুক্ষণ আশপাশ ঘুরে তারপর শপিং এ যাবো।কিন্তু তোমার তো আশার নাম নেই।বিরক্ত লাগতেছে আমার।তাড়াতাড়ি আসো।
– ওকে।
আমি ফোন রেখেই নাফিসাকে মিথ্যা বললাম যে দশমিনিটের মধ্যেই আসবে।ও বিরক্ত মুখ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দুহাত পিছনে দিয়ে আগের ন্যায় পায়চারী করতে লাগলো।ওকে দেখে মনে হলো এই দশমিনিট ওর কাছে দশ বছরের সমান।
.
আমি চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে ফেসবুক লগইন করলাম।ভালোমন্দ কিছু না পেয়ে লগআউট দিয়ে চলে আসলাম।
.
কেউ একজন দুবার ভাবী বলে ডাক দিলো।ডাকটা আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি।আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না।শুধু কয়েকটা গাড়ী ছিলো।গাড়ীর মধ্যে থেকে কেউ ডাকে নি তো!
.
হঠাৎ একটা পিচ্চি ছেলে ভাবী ভাবী বলে দৌড়ে আমার কাছে আসলো।অনেক ফরসা,চুলগুলো সিল্কি সামনে এসে আছে।আমি একবার নাফিসার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললাম”কে রে?”ও ইশারায় “জানিনা” বললো।আমি পিচ্চির দিকে তাকিয়ে বললাম,
– তুমি চেনো আমাকে?
– হুম।
আমি কিছুটা অবাক হলাম।এর আগে কখনোই এই পিচ্চিকে দেখিনি।আমি ওর সামনে বসে বললাম,
– তোমার নাম কি?
ও আমার মাথার হিজাবের দিকে তাকিয়ে বললো,
– ভাবী,এই সুইগুলোর সাথে ব্যাথা লাগে না তোমার?
এই পিচ্চির কথা শুনে আমি হাসবো না কাদবো বুঝতে পারলাম না।আমি আবার বললাম,
– তোমার নাম কি?
– ইয়াশ।
– আমাকে ভাবী ডাকলা কেনো?তোমার বড় কোনো ভাই আছে?
– হুম,আছে তো।তার জন্যই তো তুমি আমার ভাবী ।
অবাকের উপর অবাক হচ্ছি।নাফিসা বললো,
– এই পিচ্চি, কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলছো?ওর তো এখনও বিয়ে হয় নি।
আমি নাফিসাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
– তোমরা কয় ভাইবোন?
– ভাইয়া,আপু আর আমি।
– তোমার ভাইয়া কিসে পড়ে?
– এইট্টিন এ পড়ে।
আমি কিছুটা অবাক হয়ে নাফিসার দিকে তাকালাম।নাফিসা ইয়াশকে বললো,
– এইট্টিন মানে?
– এইট্টিন মানে জানোনা?এইট্টিন মানে আঠারো।
নাফিসা অসহায়ভাবে উত্তর দিলো,
– ওহ
আমি মুখ টিপে হাসলাম।হঠাৎ ইয়াশ আমার দুটো গাল টেনে দিলো।
– আহ্!কি নরম!জানো আমি এভরিডে তোমাকে অনেকগুলো কিস করি।
.
মুহূর্তের মধ্যেই হাসিটা চলে গেলো।আমার গালে আজ পর্যন্ত কাউকে টাচ করতে দেইনি।আর এই পিচ্চি কিনা মুহূর্তেই আমার গাল টাচ করলো।আবার বলছে কিসও নাকি করে।পিচ্চি মানুষ যা মন চাচ্ছে তাই বলছে।
আমি বসা থেকে উঠে বললাম,
– কোন ক্লাসে পড়ো?
– ক্লাস টু।তুমি কোন ক্লাসে পড়?
হায়রে!এইটুকু একটা পিচ্চি উল্টো আমাকে প্রশ্ন করছে আমি কিসে পড়ি?
– ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে।
– ইন্টার কি?
পাশ থেকে নাফিসা বললো,
– ইন্টার মানে ক্লাস টুয়েল্ভ।
নাফিসার উত্তরটা শুনে হঠাৎ মাথার ব্রেইন খুলে গেলো।ইয়াশ বলছিলো ওর ভাই এইট্টিন এ পড়ে।তারমানে মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে।ইয়েস!পেয়েছি।
তারপরও সিউর হওয়ার জন্য বললাম,
– তোমার ভাইয়া কি তোমার থেকে অনেক বড়?
– হুম,আমি ভাইয়ার হাতের কনুই পর্যন্ত।
– ওহ্!
আমি প্রশ্নটা অন্যভাবে করেছিলাম বাট ও এইরকম একটা আনসার দিবে সেটা ভাবিনি।
.
হঠাৎ একটা গাড়ী আমাদের সামনে আসলো।গাড়ীর গ্লাস নামানোর সাথে সাথে সানগ্লাস পড়া ফর্সা চেহারা,খোঁচা খোঁচা দাড়ি,চুলগুলো উপর দিকে উঠানো একজন ইয়াং হ্যান্ডসাম ম্যান কে দেখলাম।ক্রাশ খাওয়ার মতো একটা লুক নিয়ে সানগ্লাসটা খুলে পিচ্চিটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– কি!ভাবীর সাথে কথা বলা শেষ?এখন কি বাসায় যেতে পারি?
– অ্যা’ম কামিং।
ইয়াশ দৌড়ে গাড়ীর অন্যপাশে যেতেই উনি দরজা খুলে দিলো।ইয়াশ চুপচাপ উঠে বসলো।আর উনি সানগ্লাস পরে গাড়ী স্টার্ট দিলো।ইয়াশ হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো।
.
আমি আর নাফিসা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম।কি হলো এতক্ষণ!এটাই কি ওর বড় ভাই!
.
শিফাপু ভার্সিটি থেকে বের হয়ে আমাদের কাছে বললো,
– সরি!বেশি লেট করে ফেললাম।
– হুম!এখন তাড়াতাড়ি গাড়ীতে উঠো।
– এখনই!ঘুরে দেখবি না?
– না আপু।অন্য একদিন।এমনিতেই কেমন জানি বিরক্ত আর টেনশন লাগছে।
– কেনো?অসুস্থ নাকি?
নাফিসা বললো,
-আরে না আপু।তুমি আসার আগে একটা শর্টফিল্ম হয়ছে।
– মানে?
– গাড়ীতে উঠো তারপর বলছি।
নাফিসা পুরো ঘটনা গড়গড় করে বলে দিলো।আমি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছিলাম আর ওদের কথা শুনছিলাম।
আপু পুরো ঘটনা শোনার পর আমাকে বললো,
– ইফাজ ছেলেটা দেখতে কেমন ছিলো?
– লাল ফর্সা,খোজা খোজা দাড়ি সুন্দর একটা স্টাইলে কাটা,চুলগুলো খাড়া খাড়া উপর দিকে উঠানো আর…আর কিছু খেয়াল করি নি।
– আই সি! আমার মনে হচ্ছে তোর সাথে যার বিয়ে ঠিক করছে এইটা ওই ইফাজ।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
-আমার বিয়ে মানে?
– সে অনেক কাহিনী!আগে প্রমিজ কর কাউকে বলবি না?
আমি আর নাফিসা দুজনই প্রমিজ করলাম আপুর হাতে হাত রেখে।দুজনই শোনার জন্য খুব এ্যাক্সসাইটেড ছিলাম।উৎসুক ভাবে তাকিয়ে বললাম,
– এবার তো বলো।
– আমাদের ফ্লোরের নিচের ফ্লোরে অনিম নামের যেই ভাইয়াটা থাকে উনি এই ইফাজের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে একজন।তুই তখন ক্লাস টেন এ পড়তিস।কুরবানী ঈদের সময় যখন সাভার থেকে এখানে আসলি তখন কোনোভাবে উনি তোকে দেখে ফেলেছে।আর তুই যেই সুন্দর মানুষ, প্রথম দেখেই অন্যসব ছেলেদের মতো তোকে ভালো লেগেছিলো বোধ হয়।হাত ছাড়া করতে চায় নি যার ফলে ঈদ শেষ হওয়ার দুদিন পর ইফাজের পুরো ফেমিলি নিয়ে আসছিলো বিয়ের কথা পাকা করতে।আমি নিজেও জানতাম না,আম্মু আমাকে বলছে।তোকে বলতে মানা করেছিলো।কিন্তু আজ যেহেতু ইফাজ নিজেই ওর পরিচয় তোর সামনে দিলো।আমি লুকিয়ে কি করবো?
আমি আর নাফিসা আপুর কথাগুলো এতক্ষণ গিলছিলাম।সব যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো।এতো কিছু হয়ে গেছে আমার লাইফে আর আমি গন্ডারের মতো কিছুই টের পেলাম না?এতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে আমার হাজবেন্ড হতে চেয়েছে আর সবাই কিনা আমাকে না জানিয়ে ওয়েটিং এ রাখলো।
.
আমার পড়াশোনা করতে মোটেও ভালো লাগে না।আমার সব ফ্রেন্ডরা একশো একটা প্রেম করে সেইখানে আমি আজ পর্যন্ত কোনো ছেলের দিকে ভালোভাবে তাকায় নি পর্যন্ত।শুধুমাত্র আব্বুর কথা ভেবে।আব্বু বলেছিলো ঠিকমতো পড়াশোনা না করলে রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।সেই ভয়ে ওলওয়েজ পড়তাম।
.
এখন তো জানতে পারলাম আমার হাজবেন্ড কোনো রিকশাওয়ালা না।এখন পড়াশোনা ঘোল্লায় যাক।আমি আর পড়াশোনার মধ্যে নাই।
আমি আপুকে বললাম,
– আচ্ছা,আব্বু আম্মু মানা করলো কেনো?
– আরে গাধী,মানা করে নাই।জাস্ট বলেছে তোর এইচএসসি কমপ্লিট হওয়ার পর এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।
– আচ্ছা,পড়ুয়া একটা ছেলের বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে আসার সাহস হয় কি করে?তাও আবার ফেমিলি নিয়ে?
– ও পড়ার পাশাপাশি একটা জবও নাকি করে।আর বসুন্ধরার দিকে ওদের একটা শপিং কমপ্লেক্স আছে।ঢাকার বড় বড় দুটো মাদ্রাসা ওরা চালায়।ইফাজের আম্মুতো বোরখা পড়ে।যেদিন তোর বিয়ের কথা পাকা করতে আসছিলো ওইদিন আসতে আসতে উনাদের মাগরিব হয়ে গিয়েছিলো।আন্টি আংকেল তো কথাবার্তা শুরু করার আগে নামাজ পড়ে নিলো।ইসলামিক রীতিনীতি কিছুটা আছে ওদের মধ্যে।এখনকার বড়লোকদের যা অবস্থা!সেই তুলনায় আমার ভালোই লাগলো।বিশেষ করে আমাদের ফেমিলির মেয়েদের জন্য পারফেক্ট শশুরবাড়ি।
নাফিসা হঠাৎ বলে উঠলো,
– আমি আজই বাসায় যেয়ে আব্বুকে বিয়ের কথাটা পাকা করতে বললো।আমার দুলাভাই হিসেবে উনাকে আমার চাই।
– নাফিসা,আমাকে কিন্তু প্রমিজ করছিলি।
– প্রমিজ ফিরিয়ে নিলাম।
আমি বললাম,
– নাফিসা খবরদার।এইসব কথা তুলিস না আব্বুর সামনে।
– কেনো রে?যত দেরী করবো আমার ফ্রেন্ডেরও বলতে তত দেরী হবে।
– কি বলতে দেরী হবে?
– এই যে,আমার হবু দুলাভাই যে এত্ত হ্যান্ডসাম সেটা।
আমি আর আপু দুজন দুজনের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম।মেয়ে বলে কি এসব!
.
আপু হিজাবের সামনে ঠিক করতে করতে বললো,
– নি নাম তাড়াতাড়ি।চলে আসছি।
.
আমরা শপিং শেষ করে রাত আটটায় বাসায় আসছি।আমার সব কাজিনরা আমাদের বাসায়ই ছিলো বসে বসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো।আমি মেইন ডোর খোলার সাথে সাথে সবাই চিৎকার দিয়ে আমাদের হাত থেকে শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে একটা একটা করে দেখতে লাগলো।
.
আমরা কাজিনরা মোট আট বোন আর দুইভাই।বড়আব্বুর দুইমেয়ে রিফাপু আর শিফাপু।তারপর সিরিয়ালে আব্বু।আব্বুর দুইমেয়ে আমি আর নাফিসা।মেজো চাচ্চুর দুইমেয়ে সুরভী, সুমনা,আর একমাত্র ছেলে মেহেদী।ছোট চাচ্চুর দুইমেয়ে মিম,মায়শা এবংএকমাত্র ছেলে আসিফ।কাজিনদের মধ্যে সিরিয়ালে আমি তিন নাম্বার।
.
রাতে ডিনার করে শুয়ে পরেছিলাম রাত দশটায়।ইফাজের চেহারাটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো।কি সুন্দর উনি!আর ইয়াশ পিচ্চিটা!মাশাআল্লাহ্।
.
সকালে নাফিসা ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললো,
– আপু তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে দাদুর বাসায় চল।ওখানে পার্লার থেকে আপুরা আসছে।আমরা সবাই ওখানেই আছি।
আজ যে আপুর গায়ে হলুদ আমার মনেই ছিলো না।আমি বললাম,
– মেজো ফুপি আসে নি এখনও?
– উনি কাল বিয়েতে একেবারে আসবে।আংকেল এর ছুটি হয়নি।
– ওহ!
– তোর হলুদের ড্রেস সব আমি নিয়ে গেছি কিন্তু।আবার খুজিস না যেনো।
– আচ্ছা।
.
আমাদের এ্যাপার্টমেন্টটা আটতালার।আমরা পাচনাম্বার ফ্লোরে থাকি।প্রতি ফ্লোরে মোট আটটা করে বাসা।পাচঁ নাম্বার ফ্লোরের আটটা বাসাই দাদাভাই কিনে নিয়েছে।এই ফ্লোরের সাতটা বাসা তার সাত ছেলেমেয়ের জন্য আর তারা নিজেদের জন্য একটা কিনেছিলো।দাদা দাদি মারা যাওয়ার পর তাদের বাসাটা আমাদের সব কাজিনদের বাসা হয়ে গেছে।কাজিনরা মিলে একসাথে অনেক আড্ডা দেই ওই বাসায়।
.
বাসাগুলো বিশাল বড় বড়।ড্রয়িংরুমের স্পেস অনেক বড়।ডাইনিং এর সাথে কিচেন।মোট চারটা রুম।আর একটা গেস্টরুম।
.
আমি ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে চলে গেলাম। মেহেদি আর আসিফ ওরা শুধু ড্রেসটা পরেই নিচে চলে গেছে।সুরভী,সুমন
া আর মায়শার সাজ প্রায় কমপ্লিট।সবাই একই ডিজাইনের হলুদ শাড়ী পরেছে।শিফাপু,নাফিসা আর মিম শাড়ী পরে বসে আছে।সাজ এখনও শুরু করে নি।সবাই খোপা করেছে সাথে হলুদ ফুল।আমার সবগুলো বোন এমনিতেই অনেক সুন্দর।
.
আমি নাফিসাকে বললাম,
– আমার ড্রেস কই রেখেছিস?
আঙুলের ইশারায় দেখিয়ে বললো,
– ওই যে।
মিম বললো,
– শাড়ী পরলে তোমার কি এমন ক্ষতি হতো?আমরা সব বোনরা শাড়ী পরলাম তুমিই শুধু কামিজ পরবা।
আমি ওয়াশরুমে যেতে যেতে বললাম,
– শাড়ী পরে থাকতে পারি না।শরীরের মধ্যে কেমন যেনো উশপিশ করে।
.
সত্যি কথা বলতে আব্বু আম্মুর সামনে শাড়ী পরে ঘোরাঘুরি করতে আমার কেমন যেনো অসস্তি লাগে।আবার লজ্জাও লাগে।আম্মু আবার টিটকারি মেরে আব্বুকে বললে,ওমা! মেয়ে দেখি শাড়ী পরেছে।দেখো তোমার মেয়েকে পুরো গিন্নি গিন্নি লাগছে।আব্বু আম্মুর মুখে এইসব কথা শুনলে নিতে পারি না আমি,প্রচুর লজ্জা লাগে।
.
রেডি হয়ে সেজেগুজে এ্যাপার্টমেন্টের নিচে আসলাম।এ্যাপার্টমেন্টের সামনে বিশাল জায়গা।ফুটবল মাঠের মতো।চারপাশে উচু দেয়াল দিয়ে আটকানো।
.
আমি হলুদ কামিজ পরা,ওড়না সামনে ছেড়ে দেওয়া,চুল খোলা রেখে একপাশে হলুদ ফুল লাগানো।আমার চুল অনেক লম্বা 2’3″ ।
.
মিম আমাকে ইশারায় ওদের কাছে ডাকলো।আমি কয়েক কদম যাওয়ার পর আচমকা একটা পিচ্চি জড়িয়ে ধরলো।আমি টাল সামলাতে না পেরে সামান্য পিছনে সরে গেলাম।
part:02
.
পিচ্চিটা জড়িয়ে ধরে মুখটা উপরে উঠিয়ে বললো,
– ভাবী,কেমন আছো?
ইয়াশকে দেখে আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম।ও এখানে কিভাবে আসলো?তার মানে কি ওর ফেমিলিও আসছে?ওর ভাই আসে নি?মনের মধ্যে সামান্য ধুক্ করে উঠলো।
আমি ইয়াশের মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম “ভালো আছি” ।তারপর চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম ইফাজ এসেছে নাকি!কিন্তু উনাকে দেখতে পেলাম না।
.
আম্মুকে আমার দিকে আসতে দেখে আমি ইয়াশের হাত ধরে আম্মুর কাছে গেলাম।ইয়াশ লাফিয়ে লাফিয়ে আমার হাত ধরে হাটছে।
.
আম্মু আমাকে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে বললো,
– কাল নাকি ইফাজের সাথে তোর দেখা হয়েছিলো?
– হুম।
– বলিস নি কেনো?
– আমি তখন জানতাম নাকি উনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ছে।শিফাপুকে বলার পর আমাকে সব খুলে বলছে।
– ভালো হয়েছে।আমিও অনেকদিন থেকে বলবো বলবো করেও বলা হয় নি।
– ইয়াশ এখানে কিভাবে এলো?
-ওদের ড্রাইভার একটু আগে দিয়ে গেছে। কাল ইয়াশের সাথে তোর দেখা হওয়ার পর থেকে নাকি তোর কাছে আসার জন্য কান্নাকাটি করছিলো।বেয়াই কাল অনেক বুঝিয়ে আজ সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করাতে পেরেছে।সকাল হওয়ার পর থেকে ছটফট শুরু করছে,কখন তোর কাছে আসবে?তোকে সামনাসামনি দেখার জন্য এতোদিন উনাদের নাকি জালিয়ে খেয়েছে।তোকে দেখার জন্য চিটাগাং যাওয়ার জন্যও রাজি হয়েছিলো।ভাবতে পারছিস?
আমি আম্মুর কথা শুনে অবাক হলাম।ইয়াশের দিকে তাকালাম।ও লজ্জা পেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে মুখ লুকালো।
আর আম্মু কি সুন্দর করে বেয়াই বললো।কি নরমাল বিফেভ আম্মুর।
.
ইয়াশ আমার ওড়না একবার আঙ্গুলে পেচাচ্ছে,একবার গলায় পেচাচ্ছে।যাকে কখনো দেখেনি,চিনে না,জানেনা,তার কাছে আসার জন্য কান্নাকাটি করছে!আমি ইয়াশকে কাছে টেনে নিয়ে আসলাম!মায়া কাজ করছে প্রচুর।
.
আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
– তুমি জানলা কিভাবে কাল যে ইয়াশের সাথে দেখা হয়েছিলো?
– বেয়াই তো ফোন করে এটাই বললো ।
– এতো বেয়াই বেয়াই করছো কেনো?
– বেয়াই কে বেয়াই বলবো নাতো কি বলবো?ভাবী বলবো?
– তুমি আগে থেকেই জানতে এই বিয়ের ব্যাপারটা,তাই না?
– না রে।আমি তো জানলাম ই ছয়মাস আগে।
– ছয়মাস!এতোদিন ধরে জানো আর আমাকে কিছুই বলো নি?
– এমনি তোর পড়াশোনার যেই ছিড়ি।এই কথা যদি তুই এসএসির আগে জানতি পড়াশোনা পুরো গোল্লায় যেতো।
– একবার তো বলতে পারতা।
– আমি অবশ্য একবার লুকিয়ে তোকে সব বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু পরে তোর আব্বুর কথা মনে করে আর বলি নি।বারবার আমাকে মানা করেছে তোকে না বলতে।তোর পড়াশোনা নিয়ে অনেক টেনশন করে মানুষটা।
– উফ!সবকিছুর মধ্যে পড়াশোনা!
– একটা কথা বলি শোন?
– কি?
– ছেলেটাকে কিন্তু প্রথম দেখাতেই তোর বাবার পছন্দ হয়েছে।আমাকে কিছু মুখ ফুটে বলেনি আজ পর্যন্ত।কিন্তু মাঝে মাঝে হুটহাট আনমোনে ইফাজের প্রশংসা করে।
– তোমার পছন্দ হয় নি?
– অপছন্দ হওয়ার মতো কিছু যে ওর মধ্যে নেই।অনেক ভালো একটা ছেলে।ফেমিলিও অনেক ভালো।
আম্মুর কথা শুনে আমি মিষ্টি একটা হাসি দিলাম।
.
আম্মু ইয়াশের গালে হাত বুলিয়ে বললো,
– ওকে নিয়ে উপরে যা।বিকেলের দিকে নয়তো সন্ধ্যের দিকে ইফাজ এসে ওকে নিয়ে যাবে।
ইফাজ আসবে শুনে বুকের মধ্যে কেপে উঠলো।আমি ইয়াশকে নিয়ে বাসায় আসলাম।
.
ইয়াশ বসে বসে গোপাল ভাড় দেখছে।আমি ওর সামনে মিষ্টি,দই,পায়েস,সেমাই,ক্ষীর আরো অনেক আইটেম হাজির করলাম।ও সবগুলো আইটেম এর দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমি মিষ্টিখাবার খাই না।
আমি ওর পাশে বসে বললাম,
– সবগুলো ডিস থেকে একচামচ করে খাও।বেশি খেতে হবে না।
– উহুম,এগুলো নিয়ে যাও।আমি পানি খাবো।
– শুধু পানি?
– হুম।
আমি সামনে থেকে খাবারগুলো নিয়ে গেলাম।ওর জন্য পোলাও আর গরুর মাংস ভুনা নিয়ে আসলাম।পানির গ্লাসটা সামনে দিয়ে বললাম,
– নাও।পানি খেয়ে এই প্লেট পুরো খালি করে দাও।তোমার তো মিষ্টি পছন্দ না তাই ঝাল কিছু আনলাম।
– এখন কিছু খাবোনা।আমাকে নিক চ্যানেল বের করে দাও।মটু পাতলু দেখবো।
আমি ওর কাছ থেকে রিমোট নিয়ে নিক চ্যানেল বের করে ওর পাশে বসলাম।তারপর এক লোকমা ওর মুখের সামনে ধরে বললাম,
– নাও,হা করো।
ইয়াশ আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে হা করলো।মটু পাতলু দেখছে আর খাচ্ছে।
এর আগে কখনও এভাবে কাউকে খাইয়ে দেই নি।নিজেকে কেমন যেনো বড় বড় মনে হচ্ছে!
.
আমি আর ইয়াশ নিচে নেমে সবার সাথে গায়ে হলুদের আয়োজনে যোগ দিলাম।ইয়াশ আমার হাত একমুহূর্তের জন্যও ছাড়েনি।পাশে এ্যাপার্টমেন্টের অনেক পিচ্চি খেলা করছিলো।ওদের সাথে খেলতে বললাম কিন্তু সে আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। আমি সামান্য হলুদ নিয়ে ইয়াশের গালে লাগিয়ে দিলাম।ইয়াশও হলুদ নিয়ে আমার দুইগালে লাগিয়ে দিলো।
.
ক্যামেরাম্যানরা বিভিন্ন এ্যাঙ্গেল এ আমাদের ছবি তুললো।ইয়াশের সাথে প্রায় অর্ধেকের বেশি ছবি তুলেছি।এক একটা ছবিতে এক একটা পোজ দিয়েছি আমি আর ইয়াশ।অনেকগুলো ক্যান্ডিড পিকও আছে। আমি ঘাসের উপর বসে আছি পেছন থেকে ইয়াশ আমার গলা জড়িয়ে ধরে মুখে বিশ্বজয়ের হাসি।আরেকটা আমার হলুদমাখা গালের সাথে ওর হলুদমাখা গাল লাগানো,দুজনের মুখেই হাসি।অন্য একটাতে আমি ইয়াশকে পাচকোলে করে নিয়ে আছি,ও আমার গলা জড়িয়ে ধরে গালে কিস করছে আর আমি চোখদুটো গভীরভাবে বন্ধ করে আছি।দুদিনেই ওর সাথে এতটা গভীরভাবে মিশতে পারবো কখনোই ভাবতে পারিনি।
.
বিকেলের দিকে ইয়াশ আমাকে বললো,
– ভাবী,ওয়াশরুমে যাবো।
আমি ইয়াশকে নিয়ে বাসায় আসলাম। ওকে ওয়াশরুম দেখিয়ে দিয়ে আমি সোফায় বসে টিভি দেখছিলাম।মাথাটা প্রচুর ধরেছে।ইয়াশ ওয়াশরুম থেকে এসে সোজা আমার কোলে মাথা রেখে সোফায় শুয়ে পড়লো।আমি একহাত দিয়ে ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম আর অন্য হাতে রিমোট ছিলো।
.
অনেকক্ষণ পর ইয়াশের দিকে তাকিয়ে দেখি ও ঘুমিয়ে পরেছে।আমি ভাবলাম ও এতক্ষণ চুপচাপ টিভি দেখছিলো।আমি ওকে কোলে করে নিয়ে আমার রুমে শুইয়ে দিলাম।বাইরে মাগরিবের আযান দিচ্ছে।ড্রয়িংরু
মে আমার ফোন বাজতেই ড্রয়িংরুমে যেয়ে ফোন রিসিভ করলাম।শিফাপু ফোন করেছে!কিছুটা অবাক হলাম। নিচ থেকে আমাকে ফোন করেছে।
– হুম বলো।
– ইফাজ আসছে।সবার জন্য ইয়া বড় বড় চকলেট বক্স আনছে।সব চাচ্চুর সাথে হাগ করতেছে এখন।কি হ্যান্ডসাম!যাস্ট স্পিসলেস!আরিফের সাথে যদি রিলেশন না থাকতো তুই সিউর থাকতি এই ছেলেকে যেভাবেই হোক পটিয়ে আমার বশে আনতাম।সেটা কালো যাদুও হতে পারত!…কথাটা বলেই আপু হাসছে।
.
ইফাজ আসছে শোনার পরই বুকের ভিতর কেপে উঠলো।কাপাঁ কাপাঁ কন্ঠটা নরমাল করে আপুকে বললাম,
– এভাবে পরপুরুষের দিকে নজর দিতে লজ্জা করেনা?পাপ হবে পাপ।
– বারবার চোখ যাচ্ছে।মিমের তো দুলাভাই বলতে ভীষন কষ্ট হচ্ছে।
– মানে?
– এইরকম একটা হ্যান্ডসাম ম্যান ওর লাইফ পার্টনার হবে,এই সপ্নই তো এতকাল ধরে দেখে এসেছে।
– আমার সবগুলো বোন যে এরকম লুচু হবে ভাবতেই পারিনি।লুচ্চে কোথাকার।
আমার কথা শুনে আপু জোরে জোরে হাসছে।
– ওকে উপরে পাঠিয়ে দিচ্ছে চাচ্চু।তাড়াতাড়ি আয়নার সামনে যা।
– আয়নার সামনে যাবো মানে?
– আরে বুদ্ধু!এখন তো ইয়াশকে নিতে তোর কাছেই যাচ্ছে।নিজেকে আয়নায় দেখে নে একবার সব ঠিক আছে নাকি।পাগল কোথাকার!
– ওতো আয়না দেখা লাগবে না।
– ঢং।আমি না বললেও তুই আয়নার সামনে একবার যাইতি।
আমি ফোনটা কেটে দিলাম।মেইন ডোর লাগিয়ে দৌড়ে আমার রুমে আসলাম।বুকের ভেতর প্রচন্ড বেগে কিছু একটা দৌড়াচ্ছে!
আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে নিলাম।
.
বুকে একহাত দিয়ে নিজেকে নরমাল করার চেষ্টা করছি।জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি।কোনোভাবেই নিজেকে নরমাল করতে পারছি না।ইস!ইয়াশটা জেগে থাকলে ভালো হতো।
.
উনি একা আসবে নাকি কেউ সঙ্গে করে নিয়ে আসবে?উনি যদি একা আসে কিভাবে কথা শুরু করবো?উফ!এতো কেনো টেনশন করছি আমি!আসুক না আগে!
.
অনবরত পায়চারী করছি।হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো।আমি শেষ!ইয়াশকে আস্তে করে দুবার ডাকলাম।উঠলো না।এদিকে আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে।ওড়নাটা মাথায় দিয়ে মেইনডোরের সামনে গিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে দরজা খুললাম।
.
ওহ্ মাই গড!এত্তো সুন্দর কেনো ছেলেটা!কত্ত লম্বা!গোল্ডেন কালার একটা পান্জাবী পরা।কলার থেকে একপাশের বুক পর্যন্ত কাজ করা।বাম হাতে হ্যান্ডওয়াচ পরা!অসম্ভব সুন্দর লাগছে উনাকে!এমনি এমনি তো আমার বোনরা ওকে দেখে লুচু হয়নি।উনি আমাকে দেখেই সানগ্লাসটা খুলে মুচকি একটা হাসি দিলো।আমি হেসে সালাম দিলাম।উনি উত্তর দিলেন।উনাকে ভেতরে আসতে বললাম।
আমার হাত পা কাপছে।উনাকে কি বলবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিনা।মেইনডোর লাগিয়ে কোনোরকমে বললাম,
– বসুন।
উনি সোফায় বসে আশেপাশে তাকিয়ে বললেন,
– ইয়াশ কোথায়?
– ওতো আমার রুমে ঘুমোচ্ছে।
উনি অবাক হয়ে আস্ক করলো,
– মানে?
– সারাদিন অনেক হৈ চৈ করার পর ক্লান্ত ছিলো।বাসায় এসে টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পরেছে।
– এই টাইমে ঘুম!মানা করতে পারতে।
ইস!এমনভাবে আহ্লাদী সুরে কথাগুলো বলছে মনে হচ্ছে বিয়ে করা বউয়ের সাথে কথা বলছে।
– ও আমার কোলে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলো কখন ঘুমিয়ে পরেছে খেয়াল করি নি।পরে আর ডাকি নি।
– ওহ্।
– আপনি একটু বসুন।আমি আসছি।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে হুম বলে অনুমতি দিলো।
.
আমি আমার রুমে এসে আম্মুকে ফোন দিলাম।ওহ্ সিট!আম্মুর ফোন আম্মুর রুমে রিং হচ্ছে।তাড়াতাড়ি কল কেটে শিফাপুকে ফোন দিলাম।কয়েকবার কল দেওয়ার পরও ধরলো না।উফ!কাজের সময়ই মানুষ অমানুষের মতো বিহেভ করে।যত্তসব!হাত প্রচন্ডভাবে কাপাকাপি করছে।আব্বুকে ফোন দিলাম।রিং হচ্ছে….
– হ্যালো কে?
উফ!আব্বুটাও হয়েছে।ওলওয়েজ কে কল দিলো সেটা না দেখেই রিসিভ করে।
– আব্বু,আমি।আম্মুকে একটু ফোনটা দাও।
– দাড়া দিচ্ছি।
.
– হুম বল।
– আম্মু একটু আসো না উপরে।
– কেনো?তোদের প্রাইভেসি দিলাম কথা বলার জন্য।আর তুই উপরে যেতে বলছিস।
– আমার প্রাইভেসির দরকার নেই।আমার অনেক আনইজিফিল হচ্ছে।সামনে যেয়ে কথাও বলতে পারছি না।উনাকে কি দিবো না দিবো বুঝতে পারছি না।
– ওয়েট,ওয়েট।উল্টাপাল্টা কিছু করিস না।আমি আসছি।
– তাড়াতাড়ি আসো।
আমি ফোনটা কেটে দিয়ে ইয়াশের দিকে তাকালাম।নিরালায় ঘুমোচ্ছে ছেলেটা।আমি চুপচাপ বেডের উপর বসে পা নাচাতে লাগলাম।কিছুক্ষন পর কলিংবেলের শব্দ পেলাম আম্মু এসেছে মনে হয়।উফ!বাচলাম!
.
উনি সোফার সাথে হেলান দিয়ে পা দুটো লম্বা করে বসে বসে টিভিতে নিউজ দেখছিলো।চোখাচোখি হতেই উনি কিউট করে একটা হাসি দিয়ে বললো,
– উঠেছে?
– কে?
– ইয়াশ।
আমি এখন কি উত্তর দিবো।আমি তো ইয়াশকে ডাকতে বা উঠাতে যাই নি।কোনোরকমে “না” বলে মেইনডোর খুললাম।আম্মুকে দেখেই উনি উঠে সালাম দিলেন।আম্মুকে আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
– ইয়াশ কই?
– ও আমার রুমে ঘুমোচ্ছে।
আম্মু ভ্রু কুচঁকে চোখদুটো একদম ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকালো।আমি অসহায়ভাবে আম্মুর দিকে তাকিয়ে ইশারায় বুঝালাম এই কারনেই আনইজিফিল করছি আম্মু।
.
আম্মু আমাদের দুজনকে উদ্দশ্য করে বললো,
– তোমরা বসে গল্প করো।আমি একটু আসছি।
আম্মু কিচেনের দিকে গেলো।আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতেই চুলে টান লাগলো।আমি “আহ্”# Real_Love♥
part-:03
.
আমাকে টানতে টানতে উনি একদম উনার কাছে নিয়ে এসেছে।আমার বুকের মধ্যে একহাজার মাইল বেগে কিছু একটা ওঠানামা করছে।নিশ্বাস আটকে আটকে আসছে।প্রচুর কষ্ট হচ্ছে নিশ্বাস নিতে।
.
উনি উনার বুকের সাথে আমার পিঠ ঠেকিয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,
– গায়ে হলুদে তো হলুদ শাড়ী পরতে হয়।শাড়ী পরোনি কেনো?জানো আজ সারাদিন কতটা বিজি ছিলাম।ইভেন এখনও বিজি আছি।যাওয়ার আগে একটাবার তোমাকে শাড়ী পরা অবস্থায় দেখবো বলে ড্রাইভারকে মানা করে দিয়ে আমি নিজে ইয়াশকে নিতে এসেছি।বাট আফসোস!বউ আমার শাড়ী পরে নয় কামিজ পরে ঘুরে বেরাচ্ছে।
.
বউ কথাটা শুনে বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো।কিন্তু উনি কি বললেন?যাওয়ার আগে দেখতে এসেছেন মানে?কোথায় যাচ্ছেন উনি!
.
আমি পেছন ফিরে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– যাওয়ার আগে দেখতে এসেছেন মানে? কোথায় যাচ্ছেন?
উনি উনার দুই হাত দিয়ে আমার মাথা ধরে উনার কপালের সাথে আমার কপাল ঠেকিয়ে বললেন,
– কোম্পানির কাজে আব্বুর সাথে ইউএসএ যাচ্ছি।দশটায় ফ্লাইট।
– দশটায় মানে??সকাল দশটা??
– আজ্ঞে না মিসেস চৌধুরী।আর তিন ঘন্টা পর ফ্লাইট।
.
উনার মুখে মিসেস চৌধুরী শুনে মনের মধ্যে ধুক করে উঠলো।মিসেস চৌধুরী!সামান্য দুটা শব্দের মধ্যে এতটা ফিলিংস লুকিয়ে থাকে!বুকের ভেতরটা কাঁপছে।কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে গেলো এটা ভেবে যে,উনি একটু পর চলে যাচ্ছেন।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আসবেন কবে?
– এইতো পনেরো দিন পর।কি হলো মন খারাপ করলা নাকি?
– উহুম!
– বাব্বাহ্!বউ দেখি সত্যি মন খারাপ করেছে।এইটুকু সময়ে আমাকে এতটা আপন করে নিবে যদি জানতাম তাহলে তো আমার শ্বশুর মশাইয়ের কথা সেই কবেই অমান্য করে তোমার সাথে দেখা করা থেকে শুরু করে সবকিছু করতাম।
.
সবকিছু করতেন মানে?আমি মাথা তুলে ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– সবকিছু করতেন মানে?
– যাস্ট কথার কথা বললাম।আবার ভয় পেয়ে দূরে দূরে থেকো না যেনো।
আমি উনাকে সামান্য ধাক্কা দিয়ে বললাম,
– ছাড়ুন তো।
উনি আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই আম্মুর কন্ঠ শুনে ছেড়ে দিলেন।
.
আম্মু ডাইনিং থেকে চিৎকার করে আমাকে বলল,
– ইফাজকে নিয়ে ডাইনিং এ আয়।
.
– চলুন,আম্মু ডাকছে।
ও প্যান্টের পকেটে দুহাত দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো।আমি এক কদম পা বাড়াতেই আমার হাত খোপ করে ধরে বলল,
– আমার এখন একদম টাইম নেই।সি,অলরেডী সাড়ে সাতটা বেজে গেছে।ইয়াশকে নিয়ে এখন বাসায় যাবো।আম্মুর সাথে দেখা করে সোজা এয়ারপোর্টে যাবো।জ্যামে পরলে তো কথাই নেই।প্লিজ,আন্টিকে একটু ম্যানেজ কর।
– নো নো নো!আমি পারবো না।সবকিছু রেডি।আপনি যাস্ট খাবেন।পাঁচ মিনিটেও কিন্তু খাওয়া যায়।আর পাঁচ মিনিটে নিশ্চয় আপনার বিমান উড়ে যাচ্ছে না!বেশি কথা না বলে চলুন।
আমি উনাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবো কিন্তু পেছন থেকে উল্টো উনি আমাকে টান দিয়ে আবার আগের স্থানে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।উনার মতো জিমওয়ালা বডিবিল্ডারের সাথে কখনোই আমার মতো চিকনা একটা মেয়ের পেরে ওঠা সম্ভব না।তাই হাল ছেড়ে দিয়ে আম্মুকে ডাকলাম।হঠাৎ আম্মুকে এভাবে ডাকাতে উনি ভড়কে গেলেন।আম্মুকে আসতে দেখে আমার থেকে সামান্য দুরুত্বে দাড়ালেন।আম্মু বলল,
– চলো।সবকিছু রেডী।
আমি ভ্রু উপরে উঠিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।উনি অসহায় ভাবে আমার দিকে তাকিলো।তারপর আম্মুকে বললো,
– আন্টি, আমার এখন একদম সময় নেই।দশটায় ফ্লাইট। এখনই আমাকে বের হতে হবে।নাহলে অনেক লেট হয়ে যাবে।
– দশটায় ফ্লাইট। আর এখন বাজে মাত্র সাড়ে সাতটা।কোনো কথা হবে না।এই প্রথম তোমাকে দেখলাম।এর আগে তোমার আংকেলের সাথে তোমার দেখা হলেও আমার সাথে আজই প্রথম।তুমি আসবে বলে আমি নিজে রান্না করছি।হবু মেয়েজামাই বলে কথা না খাইয়ে ছাড়ছি না,হুম।
আম্মুর মুখে বলা মেয়েজামাই কথাটা শুনেই খালি মুখে বেশম খেলাম।আম্মু,ইফাজ দুজনই আমার বেশম্ খাওয়ার কারনটা ধরতে পেরেছে।আমি ওদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ওখান থেকে আমার রুমে চলে আসলাম।
.
ওখানে কি হচ্ছে কে জানে।যত যাই হোক আজ উনাকে না খাইয়ে আম্মু ছাড়ছে না।আমি একগাল হেসে ইয়াশের পাশে আধশোয়া অবস্থায় বসে ফোনে সামান্য ভলিউমে গান ছাড়লাম।যেই চোখটা বন্ধ করবো সেই মুহূর্তে উনি আমার রুমে ঢুকলেন।আমি অবাক হয়ে আস্ক করলাম,
– আপনি এখনও খেতে যান নি?আমি তো ভাবলাম আম্মু অলরেডী জামাই আদর শুরু করে দিয়েছে।
– জামাই না বানিয়েই জামাই আদর করবে এটা আমি মানবো না।আগে জামাই তারপর আদর।
– আম্মু কিছু বলে নি না খেয়ে এলেন যে?
– অনেক কষ্টে ম্যানেজ করেছি।
.
.
উনি আমার পুরো রুম ঘুরে ঘুরে দেখছে।এমনকি ওয়াশরুমটাও বাকি রাখে নি।অবশ্য আমার ওয়াশরুমটা যথেষ্ট ক্লিন।এই ওয়াশরুমটা বেশি ইউজও করা হয় না।এই বাসায় আসিই তিন চার দিনের জন্য।
.
আমি ঘুমন্ত ইয়াশের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছিলাম।ইয়াশ ঘুমের মধ্যেই একহাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলো।আমি পা লম্বা করে রেখেছিলাম।উনি এসে আমার পায়ের কাছে বসলো।উনার বসা দেখে আমি নিজের পা ভাঁজ করলাম।উনি ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– ভাবীকে জড়িয়ে ধরে কি আরামে ঘুমাচ্ছে।আমি যে কবে এভাবে ঘুমাতে পারবো?
– আপনার তো বড় কোনো ভাই নেই।আপনি এই আরাম কোনোদিনও পাবেন না।
– মানে?
-বোঝেন নি?মানে আপনার ভাই থাকলে ভাবী হতো আর সেই ভাবীকে এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে পারতেন।
.
আমি বুঝেও যে না বোঝার ভান করে কথাগুলো বলছি সেটা উনি ধরতে পেরেছেন।উনি উঠে আমার একদম কাছে এসে দুহাত দিয়ে চুলের ভেতর দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললেন,
– আমি ভাবীকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর কথা বলি নি পাগলী।তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর কথা বলেছি।
উনার হাতের স্পর্শ আমার গলার গভীরে গিয়ে গলার ভেতরসহ সারা শরীর কাপছে আর উনার কথাগুলো বুকের ভেতরে গিয়ে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাল্লা দিয়ে কাপছে।চোখগুলো আবেশে বন্ধ হওয়ার উপক্রম।অনেক কষ্টে তাকিয়ে আছি।সামান্য এইটুকু স্পর্শের মধ্যে এতটা সুখ লুকিয়ে থাকে কল্পনাও করিনি।উনি বললেন,
– কি হলো?চুপ কেনো?
– উহু!
– কি উহু!
আমি কোনো কথা বলতে পারলাম না।কিছুক্ষন পর উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
– তোমার কাছে আর থাকা যাবে না।তোমার কাছে থাকা মানে তোমার ভাষ্যমতে আমার বিমান আমাকে রেখেই উড়ে যাওয়া।ইয়াশকে নিতে তোমার রুমে এসেছিলাম।বাট দেখো এখনও নিতেই পারলাম না।
– ও তো এখনো ঘুমোচ্ছে।
– এটাই তো সুযোগ।
– মানে?
– মানে ওকে ঘুমোনো অবস্থায়ই নিয়ে যেতে হবে।নাহলে জেগে গেলে পরে আর তোমাকে ছেড়ে যেতে চাইবে না।
.
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি আস্তে করে আমার কোমড় থেকে ইয়াশের হাত আলাদা করে কোলে তুলে নিলো।পেছনে ফিরে আমাকে বললো,
– বসে আছো কেনো?আমার সাথে আসো।
– কেনো?
উনি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।আমিও উনার পেছন পেছন গেলাম।লিফ্টের মধ্যে দুজনই চুপচাপ ছিলাম।লিফ্ট থেকে বের হয়ে দেখলাম আমার কাজিনরাসহ ফ্লাটের সবাই অনেক আনন্দ করছে।মিম,সুরভী,আসিফ আমাকে দেখে আমার কাছে এসে বললো,
– জানো,আমরা কত্ত মজা করছি।আজ সারারাতও অনেক মজা করবো।সন্ধ্যের পর তো তোমাকে আর দেখিই নি।আজ রাতে কিন্তু আমাদের সাথে জাগতে হবে।
– ওকে।ঠিক আছে।তোরা যা।আমি ওদের এগিয়ে দিয়ে আসি।
সুরভী ইফাজের দিকে তাকিয়ে বললো,
– ভাইয়া আপনি চলে যাচ্ছেন? এখনই কেনো?একটু আগেই না আসলেন!
– একটু তাড়া আছে।অন্য একদিন আসবো।
– আচ্ছা।টাটাহ্।
– টাটাহ্!
.
উনি ইয়াশকে গাড়ীর পেছনের সিটে শুয়ে দিয়ে দরজা লক করলো।তারপর আমার হাত ধরে গাড়ীর সামনের দিক দিয়ে ঘুরিয়ে অন্যপআশে নিয়ে গেলো।গাড়ীর দরজা খুলে বড় একটা গিফ্টের বক্স বের করলো,
– এটা কি?
– গিফ্ট।
– কার জন্য?
– কার জন্য মানে?obviously তোমার জন্য।নাও।
আমি তো মহাখুশী।লাফাতে ইচ্ছা করছে।কোনোরকমে গিফ্টটা সরিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– থ্যাংক ইউ!!!থ্যাংক ইউ সো মাচ!!!
উনিও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
– তুমি যে এতোটা হ্যাপি হবে ভাবতে পারিনি।থ্যাংক ইউ।
আমি উনাকে ছেড়ে দিয়ে বললাম,
– আপনি কেনো থ্যাংকস্ বলছেন?
– এই যে এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য।
আমি সামান্য লজ্জা পেয়ে কোনোকিছু না ভেবে উনার হাত থেকে গিফ্টের বক্সটা নিয়ে বললাম,
– এখন আপনার লেট হচ্ছে না?
কথাটা শুনে উনি হাত দিয়ে নিজের মাথার চুল ঝাকিয়ে বললো,
– উফ্!তোমার সাথে থাকলে সময়েরও হিসাব থাকে না আমার।
আমি হেসে বললাম,
– হয়েছে!এখন যান।
– হুম বাই।
– হুম!
.
উনি গাড়ী স্টার্ট দিয়ে আমাকে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিলো।আমিও হাসি হাসি মুখে বিদায় দিলাম।
.
.
(চলবে) করে সামান্য আওয়াজ করলাম।ডান হাত দিয়ে মাথার পেছনের দিকে ধরে পেছনে তাকালাম।উনি ঠোঁটে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে উনার হাতের সাথে আমার চুল পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে একদম উনার কাছে নিয়ে যাচ্ছে।
.
(চলবে)
বিঃ দ্রঃ নিচে Next >> ক্লিক করলে পরবর্তী পর্ব পাবেন..!
Facebook Comments
People Came Here By Searching :
Jokes, bangla golper boi, bangla jokes pdf, bengali jokes pdf, bangla jokes book pdf download, gopal bhanrer 111 hasir golpo, bangla jokes pdf free download, bangalir hasir golpo, bdjobs, yo mama jokes, adult jokes, funny jokes app, school jokes, funny jokes dirty, jokes app, joke book, short funny jokes, jokes in english, dad jokes, funny jokes, jokes, jokes for kids, dirty jokes, yo mama jokes, adult jokes, funny jokes dirty, short funny jokes, hilarious jokes, clean jokes, really funny jokes, good jokes, funniest jokes ever, funniest joke in the world, inappropriate jokes, short jokes, deez nuts jokes, blonde jokes, bad jokes, offensive jokes, pun jokes, mom jokes, little johnny jokes,
jokes dirty, hilarious jokes, jokes for adults, very funny jokes, funny jokes clean, seriously funny jokes, dad jokes, corny jokes, , seriously funny jokes, funny jokes clean, funny jokes dirty, i need a funny joke, very funny jokes in english, most hilarious joke, funny knock knock jokes, funny jokes for adults, , clean jokes that are actually funny, funniest clean joke ever, greek jokes clean, clean joke of the day, somewhat clean jokes, long clean jokes, edgy clean jokes, i need a funny joke, funny jokes for kids(10-11), sick kid jokes, funny jokes for kids: 100 hilarious jokes, funny jokes for kids(8-9), funny jokes for kids(10-11) in hindi, kids joke of the day, silly jokes, jokes and riddles, , silly jokes for adults, funny silly jokes, 25 silly jokes, crazy silly jokes, seriously funny jokes, very funny jokes, hilarious jokes, awesome jokes, Jokes, bangla golper boi, bangla jokes pdf, bengali jokes pdf, bangla jokes book pdf download, gopal bhanrer 111 hasir golpo, bangla jokes pdf free download, bangalir hasir golpo, bdjobs, yo mama jokes, adult jokes, funny jokes app, school jokes, funny jokes dirty, jokes app, joke book, short funny jokes, jokes in english, dad jokes, funny jokes, jokes, jokes for kids, dirty jokes, yo mama jokes, adult jokes, funny jokes dirty, short funny jokes, ilarious jokes, clean jokes, really funny jokes, good jokes, funniest jokes ever, funniest joke in the world, inappropriate jokesshort jokes, deez nuts jokes, blonde jokes, bad jokes, offensive , jokes, pun jokes, mom jokes, little johnny jokes

No comments:
Post a Comment